পঞ্চগড় থেকে দেখা যাচ্ছে হিমালয় কন্যা কাঞ্চনজঙ্ঘা

মনিটর রিপোর্ট Date: 23 September, 2022
পঞ্চগড় থেকে দেখা যাচ্ছে হিমালয় কন্যা কাঞ্চনজঙ্ঘা

 এমনই সময়ে পঞ্চগড় তেঁতুলিয়া থেকে প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্বের তৃতীয় সবোর্চ্চ পবর্তশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলছে। 
স্থানীয়রা জানান, সাধারণতসেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত শীতের আগে মেঘমুক্ত নীলাকাশে ভেসে ওঠে তুষার শুভ্র হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘা। বছরের এই নির্দিষ্ট সময়ে বাংলাদেশ থেকে দৃশ্যমান হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখতে প্রতি বছরই অসংখ্য পর্যটক সেখানে যান।
      স্থানীয় আনোয়ার আলী বলেন, এ বছর গতকাল প্রথম কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেল। পর্যটকদের জন্য এটি আনন্দের সংবাদ। কারণ হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে প্রতি বছর পাসপোর্ট-ভিসা করে নেপালে গিয়ে দেখতে হয়। আর সেখানে কোনো পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই তেঁতুলিয়ায় এসে জেলা পরিষদ ঐতিহাসিক ডাকবাংলোর পিকনিক কর্নার থেকে খালি চোখে দেখা যাচ্ছে।
     তিনি বলেন।,  সূর্যোদয়ের পর থেকেই চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো স্থানীয়দের চোখে ধরা পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার নয়নাভিরাম নৈসর্গিক রূপ। সূর্যকিরণের তেজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সকাল দশটা থেকে এগারটা পর্যন্ত বেশ ভালোভাবেই দেখা যায়। তারপর ক্রমান্বয়ে আবার ঝাপসা হয়ে হারিয়ে যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। তবে শেষ বিকেলে সূর্যকিরণ যখন তির্যকভাবে বরফাচ্ছাদিত পাহাড়ে পড়ে তখন অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে আবারও ধরা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। 
    উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, দেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন (স্থলবন্দর) থেকে নেপালের দূরত্ব ৬১ কিলোমিটার, ভুটানের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার, চীনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার, শিলিগুড়ির দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। অন্যদিকে হিমালয়ের এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার আর কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। কিন্তু মেঘ-কুয়াশামুক্ত আকাশের উত্তর-পশ্চিমে তাকালেই দেখা মেলে বরফ আচ্ছাদিত সাদা পাহাড়, মনে হয় এইতো চোখের সামনেই কাঞ্চনজঙ্ঘা! সূর্যোদয়ের আগে কিছুটা কালো দেখায় কাঞ্চনজঙ্ঘা।
   জানা গেছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গ নেপাল ও ভারতের সিকিম সীমান্তে অবস্থিত। হিমালয় পৃথিবীর সবোর্চ্চ পর্বতমালা। এই পর্বতমালার তিনটি চূড়া আবার পৃথিবীর সবোর্চ্চ চূড়া। এরমধ্যে প্রথম অবস্থানে থাকা মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার বা ২৯ হাজার ২৯ ফিট। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চূড়া কেটু’র উচ্চতা ৮ হাজার ৬১১ মিটার বা ২৮ হাজার ২৫১ ফিট। তৃতীয় অবস্থানে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার বা ২৮ হাজার ১৬৯ ফিট। যদিও ১৮৫২ সালের আগে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে পৃথিবীর সৰ্বোচ্চ শৃঙ্গ বলে মনে করা হতো। ১৯৫৫ সালের ২৫ মে মাসে ব্রিটিশ পবর্তারোহী দলের সদস্য জোয়ে ব্রাউন এবং জর্জ ব্যান্ড সর্বপ্রথম কাঞ্চনজঙ্ঘায় আরোহণ করেন।

এদিকে, সুউচ্চ এই চূড়া দেখতে প্রতি বছর অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটক ছুটে যান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলা শহরের টাইগার হিল পয়েন্টে। টাইগার হিলই হচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দেখার সবচেয়ে আদর্শ জায়গা। তবে কেউ কেউ যান সান্দাকপু বা ফালুট। আবার কেউ কেউ সরাসরি নেপালে গিয়েও কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। 
   তবে যাদের এসব সুযোগ মেলে না সেইসব বাংলাদেশি পর্যটকেরা কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ অবলোকন করতে ছুটে যান তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধায়। এখানে মেঘমুক্ত আকাশে দিনের প্রথম সূর্যকিরণের সঙ্গে সঙ্গেই চোখে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা। একটু বেলা বাড়লেই তেজোদীপ্ত রোদ যখন ঠিকরে পড়ে বরফাচ্ছাদিত পাহাড়ের গায়ে, কাঞ্চনজঙ্ঘা তখন ভিন্নরূপে ধরা দেয় পর্যটকের চোখে। যে রূপের টানে প্রতি বছর হাজারো পর্যটক আসেন তেঁতুলিয়ায়।

-B

Share this post



Also on Bangladesh Monitor