ঢাকাঃ ব্যাংক খাত থেকে আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা বের করে বিভিন্নভাবে পাচার হয়েছে। তাই এসব ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। এই সংকট সমাধানের ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে টাকা ছাপিয়ে নয়, আন্তঃব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্যারান্টার হয়ে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে তারল্য ব্যবস্থা করে দেবে। আমানতকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তাদের স্বার্থ দেখবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) ব্যাংকার্স সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনুসর এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, সাত-আটটি ব্যাংকের কারণে সব ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। আমানতকারীদের কথা ভেবে আমরা সীমিত পরিসরে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দিতে চাই। দেশ থেকে আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রচুর টাকা পাচার হয়েছে। এতে এসব ব্যাংকের তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। সরকার আমানতকারীদের কথা ভেবে তাদের পাশে দাঁড়াবে। তবে পুরো সাপোর্ট দিতে হলে দুই লাখ কোটি টাকার প্রয়োজন। টাকা ছাপিয়ে এই সহায়তা করলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।
আমানতকারীদের একসঙ্গে টাকা উত্তোলন না করার পরামর্শ দিয়ে গভর্নর বলেন, প্রয়োজন মতো টাকা উত্তোলন করুন। কিছুটা সময় দেন। আশা করি ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, এই সাত থেকে আটটি ব্যাংকের কারণে পুরো ব্যাংকিং খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে। দেশের ব্যাংক খাতের ওভারঅল কোনো সমস্যা নেই। ব্যাংকিং খাত সচল। এক ব্যাংকের টাকা অন্য ব্যাংকে গেছে। সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি উন্নতি হবে। কারণ, প্রতিটি ব্যাংকের বোর্ড ভাঙা হয়েছে, ম্যানেজমেন্টও চেঞ্জ হবে। ফলে গুণগত মানও পরিবর্তন হবে। প্রতিটি ব্যাংকে অডিট হবে। পাশাপাশি নতুন কার্যপ্রণালি কী হতে পারে, তা দেখা হবে। সেক্ষেত্রে কোনো ব্যাংকে প্রয়োজনে মার্জ বা রিকুইজিশন করা হবে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, বড় বড় ঋণখেলাপিদের ধরা হবে। তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ যত সম্পদ আছে, তা জব্দ করা হবে। দেশের বাইরে যা চলে গেছে তা ফেরাতে বিশ্বব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কথা হয়েছে। দেশের বেশিরভাগ অর্থ পাচার হয়েছে ব্রিটেন, দুবাই, সিঙ্গাপুর এবং যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিভাবেই এসব অর্থ ফেরানো হবে। তাই তাদের সহায়তা চেয়েছি। তিনি জানান, পাচারকারী একটি পরিবার ব্রিটেনে ৫০০ থেকে ৬০০টি বাড়ি কিনেছেন বলে শুনেছি। সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এ ছাড়া যারা ব্যাংক লুট করেছে, তাদের দেশে থাকা সম্পদ থেকে দায় শোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এরপর তাদের বিদেশি সম্পদে হাত দেব।
ইসলামী ব্যাংকে তারল্য সুবিধা দিতে ভুয়া ডলার ক্রয় দেখিয়ে অর্থ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর সঙ্গে সাবেক গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর ও নির্বাহী পরিচালক জড়িত ছিল। এ বিষয়ে পদক্ষেপের বিষয় জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, সামনের দিকে যেতে চাই। এটা কোনোভাবে একটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য সম্মানজনক বিষয় নয়। এটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর হয়েছে। তবে এখন সমন্বয় করা হয়েছে।
ব্যাংক খাত পুনরুদ্ধারে তিনটি টাস্কফোর্স গঠন হবে : দেশের ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি উন্নয়তে বাংলাদেশ ব্যাংক তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করবে বলে জানান অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হোসেন।
ব্যাংকার্স সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি উন্নয়নে নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) ব্যবস্থাপনা, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট ও লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক ইস্যুতে তিনটি আলাদা টাস্কফোর্স গঠন করা হবে বলে গভর্নর তাদের জানিয়েছেন। এসব টাস্কফোর্সে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিশেষজ্ঞদের রাখা হবে। তবে টাস্কফোর্স গঠনে কেমন সময় লাগবে, তা ঠিক করা হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজারে এখন ডলারের অভাব নেই, যার যখন প্রয়োজন এলসি খুলতে পারছেন।
-B