প্রকৃতির কন্যা খ্যাত পার্বত্য জেলা বান্দরবান নির্ধারিত সময়ের আগেই জাতীয় মহাসড়কে যুক্ত হলো।
২৬৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে (বান্দরবান-কেরানীহাট জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের কাজ) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্বাবধানে এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করেছে সেনাবাহিনীর ২০ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন।
পর্যটন শহর হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার দেশি বিদেশি পর্যটকসহ স্থানীয়রা যাতায়াতের জন্য কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কটি ব্যবহার করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জেলার একমাত্র সড়কটি আঁকা বাঁকা ঢালু ও সরু হওয়ায় প্রায়ই ঘটতো নানা ধরনের দুর্ঘটনা। শুধু তাই নয়, সড়কের বিভিন্ন স্থানে নিচু হওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমে কয়েকদিন বৃষ্টি হলে রাস্তার বিভিন্ন অংশ তলিয়ে যেত। আর এর ফলে সারাদেশের সঙ্গে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা।
সূত্রমতে, প্রকল্পের আওতায় ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কেরানীহাট- বান্দরবান সড়কটি জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করায় এখন লাঘব হবে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি। সেই সঙ্গে প্রকৃতির কন্যা বান্দরবানের সৌন্দর্য দেখতে আরও হাজারো পর্যটক ছুটে আসবেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে।
পাশাপাশি উন্নত হবে স্থানীয়দের জীবনমান ও হ্রাস পাবে সড়ক দুর্ঘটনা এমনটাই প্রত্যাশা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষহওয়ায় স্থানীয় ও পর্যটকরা খুবই বিমোহিত। আগে এ সড়কের অনেক স্থানে ভাঙা ছিল ও উচু নিচু আকাঁবাকা ছিল। কিন্তু এখন এ সড়কটি অনেক বড় হয়েছে এবং প্রশস্ত হয়েছে।
বান্দরবান চট্টগ্রাম সড়কের বাস চালক মো. জসীম বলেন, বান্দরবান সড়কে এখন বাস চালানো আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গেছে। সড়কের মান ভালো হয়েছে ও বেশিরভাগ স্থানে সড়কের পাশে সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রোড ডিভাইডার থাকায় দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে।
তারা বলেন, সম্প্রতি পর্যটকের ব্যাপক সমাগম না হলেও পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় দেখা যাচ্ছে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে বেড়াচ্ছেন নীলগিরি থেকে নীলাচল। কেউবা ছুটছেন কেওক্রাডংয়ের খোঁজে। এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে। এখানে রয়েছে অসংখ্য ঝিরি-ঝর্ণা, মেঘলার লেক, নজরকারা স্বর্ণমন্দির, নীলাচল, নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, বগালেক, রেমাক্রি, নাফাকুম, বড়পাথরসহ সরকারি-বেসরকারি অনেক পর্যটনকেন্দ্র। চাঁদের গাড়িতে করে পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন এসব পর্যটনকেন্দ্রে। কেউবা মাইক্রোবাসে চড়ে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর কেরানীহাট-বান্দরবান জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান, প্রশস্ততা ও উচ্চতায় উন্নীতকরণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়। পরে তারা প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের আগেই (১৫ ডিসেম্বর ২০২২) সফলভাবে সম্পন্ন করে।
প্রকল্পের আওতায় ২১টি ব্রিজ, ১৫টি কালভার্ট, ২১ কিলোমিটার ড্রেনেজ নিস্কাশন অবকাঠামো তৈরিসহ সড়ক প্রশস্তকরণ কাজের গুনগত মান বজায় রেখে কাজ শেষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
সড়ক বিভাগ বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোসলেহ্উদ্দীন চৌধুরী বলেন, সড়কটি জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত হওয়ায় ফলে এখন নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের আরও প্রসার ঘটবে।
-B