ঢাকা : বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডসহ বিভিন্ন সংস্থা দিবসটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য-‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’। পর্যটনের ভূমিকা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উপযোগিতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া এই দিবসের লক্ষ্য। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে সকাল সাড়ে ৭টায় আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সামনের সড়কে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) উদ্যোগে ১৯৮০ সাল থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালন করা হয়।
এদিকে, পর্যটন দিবসে সারা দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে এক ছাদের নিচে আনতে চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। আজ বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন করা হবে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সিইও আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, ২৭ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর এ উৎসবে এয়ারলাইন্স, হোটেল, রিসোর্ট, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, ট্যুরিস্ট-ভেসেল, ট্রাভেল এজেন্ট ও ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে। অংশগ্রহণ করবে বিভিন্ন জেলার পর্যটন পণ্য ও সেবা প্রদানকারীরা। দেশব্যাপী পর্যটনের বিভিন্ন অফার ও আয়োজন থাকবে এ উৎসবে। দর্শনার্থীদের আগামীর বাংলাদেশে তাদের আকর্ষণীয় ট্যুর প্ল্যান তৈরি করতে এ উৎসব সহায়তা করবে। এ উৎসবে আয়োজন থাকবে বিভিন্ন দেশের খাবারসহ বাংলাদেশের অথেন্টিক ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের।
আরও পড়ুন: টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে পরীক্ষামূলক জাহাজ চলাচল শুরু
কক্সবাজারে কার্নিভ্যাল : কক্সবাজার সৈকতে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে বসছে সাত দিনব্যাপী পর্যটন মেলা-বিচ কার্নিভ্যাল। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আজ থেকে পর্যটকদের কক্সবাজারমুখী করতে মেলায় সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মেলা আজ শুরু হয়ে চলবে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত।
কুয়াকাটায় উৎসব : পর্যটন দিবসটি উপলক্ষ্যে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় তিন দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করেছে উপজেলা প্রশাসন ও কুয়াকাটা পৌরসভা। আজ থেকে শুক্রবার পর্যন্ত কুয়াকাটা সৈকতের ট্যুরিজম পার্ক সংলগ্ন এলাকায় মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন চলবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য শিল্পীরা অংশগ্রহণ করবেন। এদিকে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে কুয়াকাটার সব হোটেল-মোটেলে ৫০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে মালিক কর্তৃপক্ষ।
পর্যটন হোটেলে ছাড় : বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের (বাপক) হোটেল-মোটেলে রুম ভাড়ায় ২৭ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। ভ্রমণপিপাসুরা আজ পর্যটন কর্পোরেশনের যেকোনো হোটেলে থাকলে এ ছাড় উপভোগ করতে পারবেন। ডিসকাউন্ট ছাড়াও পর্যটন দিবসে লাইভ কুকিং শো এবং স্বল্পমূল্যের প্যাকেজ ট্যুরও দেবে বাপক।
পর্যটন শিল্পের প্রসারে কাজ করছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার পর্যটন শিল্পের যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবন করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই শিল্পের প্রসারে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘এ লক্ষ্য অর্জনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদের সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বিভিন্ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০১০ সালে জাতীয় পর্যটন উন্নয়ন নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে-যাতে টেকসই পর্যটন উন্নয়নের লক্ষ্যে ইকো-ট্যুরিজম, কমিউনিটি বেজড ট্যুরিজম, দায়িত্বশীল পর্যটনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পর্যটন শিল্পের কার্যকর উন্নয়ন দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার মাধ্যমে ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।’
প্রধানমন্ত্রী আজ বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস’ উপলক্ষ্যে এক বাণীতে এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: রেকর্ডসংখ্যক পর্যটকের আশায় সাগরকন্যা কুয়াকাটা
তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস ২০২৩’ পালিত হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত। জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত এবারের প্রতিপাদ্য ‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’ বর্তমান প্রেক্ষাপটে যথার্থ হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পর্যটন শিল্পের জন্য শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করে এই পৃথিবীর টেকসই অবকাঠামো এবং সবুজ রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করতে হবে। তাহলেই উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পে সত্যিকারের সমৃদ্ধি আসবে। টেকসই পর্যটন উন্নয়ন ধারণা অনুসরণে জীববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ, স্থানীয় ঐতিহ্য ও কৃষ্টির পরিবর্তন না ঘটিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের উদ্যোক্তা এবং জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশের পর্যটনের বিকাশে সবাইকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।
পর্যটনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনুধাবন করেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় পর্যটনকে গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সড়ক, রেল, বিমান ও নৌ যোগাযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: নানা আয়োজনে বান্দরবানে বিশ্ব পর্যটন দিবস উদ্যাপন
তিনি বলেন, নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড়-পর্বত, অরণ্য, জীব-বৈচিত্র্য, সমুদ্র-সৈকত, নদ-নদী, বৈচিত্র্যময় আদিবাসী সংস্কৃতি, সমৃদ্ধ ও গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি, ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, অতিথিপরায়ণ মানুষ অর্থাৎ বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের যেকোনো পর্যটককে আকৃষ্ট করার মতো সব উপকরণই বাংলাদেশে বিদ্যমান। পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখে, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখে স্থানীয় জনসাধারণকে পর্যটন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করে টেকসই পর্যটন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আমাদের দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।
-B